পাত্র-পাত্রী নির্বাচন এর ক্ষেত্রে দ্বীনদারিত্বকে প্রাধান্য না দিলে ধ্বংস অনিবার্য
পাত্র-পাত্রী নির্বাচন এর ক্ষেত্রে দ্বীনদারিত্বকে প্রাধান্য না দিলে ধ্বংস অনিবার্য।
━═━═━═━═━═━═━═━═━━═━═━═━═━═━═━
■ পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে:
□ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয়ঃ তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারী। সুতরাং তুমি দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
- (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫০৯০)
যে সব কারণে একজন পুরুষ বিশেষ একটি মেয়েকে স্ত্রীরূপে বরণ করার জন্য উৎসাহিত ও আগ্রহান্বিত হতে পারে তা হচ্ছে চারটি।
□ সৌন্দর্য
□ সম্পদ
□ বংশ
□ দ্বীনদারী।
এ গুণ চতুষ্টয়ের মধ্যে সর্বশেষে উল্লেখ করা হয়েছে দ্বীনদারী ও আদর্শবাদিতার গুণ। আর এ গুণটিই ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বাগ্রগণ্য ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। নবী করীম (সা:) - এর আলোচ্য নির্দেশের সার কথা হল, দ্বীনদারী গুণসম্পন্না কনে পাওয়া গেলে তাকেই যেন স্ত্রীরূপে বরণ করা হয়, তাকে বাদ দিয়ে অপর কোন গুণসম্পন্না মহিলাকে বিয়ে করতে আগ্রহী হওয়া উচিত নয় - (সুবুলুস সালাম)।
চারটি গুণের মধ্যে দ্বীনদার হওয়ার গুণটি কেবল যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তা-ই নয়, এ গুণ যার নেই তার মধ্যে অন্যান্য গুণ যতই খাকুক না কেন, ইসলামের দৃষ্টিতে সে অগ্রাধিকার যোগ্য কনে নয়। রসূল (সা:)-এর হাদীস অনুযায়ী তো দ্বীনদারীর গুণ বঞ্চিতা নারী বিয়ে করাই উচিত নয়।
তিনি স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন- তোমরা স্ত্রীদের কেবল তাদের রূপ-সৌন্দর্য দেখেই বিয়ে করো না- কেননা এরূপ সৌন্দর্যই অনেক সময় তাদের ধ্বংসের কারণ হতে পারে। তাদের ধন-মালের লোভে পড়েও বিয়ে করবে না, কেননা এ ধনমাল তাদের বিদ্রোহী ও অনমনীয় বানাতে পারে। বরং তাদের দ্বীনদারীর গুণ দেখেই তবে বিয়ে করবে। বস্তুত একজন দ্বীনদার কৃষ্ণাঙ্গ দাসীও কিন্তু অনেক ভাল
- (ইবনে মাজাহ, বায্যার, বাইহাকী)।
নবী করীম (সা:)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল - বিয়ের জন্য কোন্ ধরনের মেয়ে উত্তম? জবাবে তিনি বলেছিলেন- যে স্ত্রীকে দেখলে সে তার স্বামীকে আনন্দ দেয়, তাকে যে কাজের আদেশ করা হয় তা সে যথাযথ পালন করে এবং তার নিজের স্বামীর ধন মালের ব্যাপারে স্বামীর পছন্দের বিপরীত কোন কাজই করে না।
- (মুসনাদে আহমাদ)
নবী করীম (সা:) আরো বলেছেন, দুনিয়ার সব জিনিসই ভোগ সামগ্রী আর সবচেয়ে উত্তম সামগ্রী হচ্ছে নেক চরিত্রের স্ত্রী।
- (মুসনাদে আহমাদ)।
উপরের উদ্ধৃত হাদীসগুলো থেকে যে কথাটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তা এই যে, ইসলামের দৃষ্টিতে তাকওয়াবান, পরহেযগারী, দ্বীনদারী ও উন্নত চরিত্রই হচ্ছে জীবন সঙ্গিনী পছন্দ করার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।
━═━═━═━═━═━═━═━═━━═━═━═━═━═━═━
■ পাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে:
উপযুক্ত পাত্রের কাছ থেকে বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া উচিত নয়।
□ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যদি এমন কেউ তোমাদের বিয়ের প্রস্তাব দেয়, যার ধার্মিকতা ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট, তবে তোমরা তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবে। যদি তা না করো, তা যদি না কর তাহলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।”
- (জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১০৮৪)
মুহাম্মাদ (সাঃ) আরও বলেন, “তিনটি বিষয়ে দেরি করা উচিত নয়ঃ
□ সালাত আদায়- যখন সালাতের সময় হয়ে যায়,
□ কবর দেওয়া- যখন জানাযা হয়ে যায় এবং
□ একজন নারীর বিয়ে- যখন সম মর্যাদা সম্পন্ন কোন পুরুষ বিয়ের প্রস্তাব দেয়।”
- (আল তিরমিযী)
এই হাদীস থেকেও বুঝা যায়, উত্তম চরিত্রের পাত্র ফিরিয়ে দেওয়া মারাত্মক অন্যায়। যে এই কাজটি করবে তার ধ্বংস অনিবার্য। সময়ের সাথে সাথে সে তার ভুল বুঝতে পারবে।
আমাদের সমাজে পাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে দ্বীনদার থেকে তার সম্পদকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। সম্পদ কখনো কাউকে সুখী করতে পারে না। এটা সাময়িক সুখ, আজ আছে কাল থাকবেনা।
রাসূল (সা:) এর এই হাদীসগুলো follow না করার কারণে অকালে ভেঙে যাচ্ছে অনেক সংসার। শেষ হয়ে যাচ্ছে দুইটা জীবন। এর দায়ভার কিন্তু কোনো পক্ষের বাবা-মা নিবে না। কিন্তু বিয়ের সিদ্ধান্ত তারা নিবে। ভুলগুলো তাদের সন্তানদের উপর চাপিয়ে দিবে। এইটাই আমাদের নোংরা সমাজের বৈশিষ্ট্য। অথচ রাসূল (সা:) এর সুন্নাহ হলো, পাত্র-পাত্রী একজন আরেকজনকে পছন্দ করবে।
পৃথিবীতে এমন কোনো নজীর নেই যে, কোরআন ও হাদিসের সুন্নাহর বাহিরে গিয়ে কেউ সুখী হতে পেরেছে। বরং তারা সুখের সন্ধান করতে করতে নিজেদের ধ্বংস করে দিয়েছে।
তাই, আপনার দায়িত্ব এই হাদীস গুলোর মাধ্যমে বাবা মাকে বুঝানো। তারা হয়তবা দুনিয়ার ফিৎনায় ফেঁসে গিয়েছে। কিন্তু আল্লাহ আপনাকে যথেষ্ট প্রজ্ঞা এবং অন্তর দিয়ে অনুধাবন করার শক্তি দিয়েছেন।
জীবন একটাই, তাই ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিবেন। আল্লাহ সকলে সুখী সুন্দর দাম্পত্য জীবন দান করুক। আমিন।
Leave a Comment