আযান চলাকালীন ঘোমটা দেওয়া ও কিছু কথা।


একটা কমন সিন- আযান দেওয়ার সময় দেখা যায়,আমাদের মা,বোন,চাচি,জেঠি রা মাথায় কাপড় দিয়ে থাকে,সোজা বাংলায় যাকে ঘোমটা দেওয়া বুঝায়। আবার অধিকাংশ সময় দেখা যায় মা-চাচিরা তাদের মেয়ে বা ছেলের বউ দের আযান দেওয়ার সময় ঘোমটা দিতে বাধ্য করে। ব্যাপার টা এখানে শেষ নয়, যারা সারাদিন পর্দা করে না, গায়রে মাহরাম মানে না, বেপর্দায় চলে তারাও আযানের সময় মাথায় কাপড় বা ঘোমটা দিয়ে থাকে।


এখন প্রশ্ন হলো, আযান দেওয়ার সময় মাথায় কাপড় দেওয়ার কি কোনো শরীয়াত ভিত্তিক নির্দেশনা আছে? 


প্রথমত, নারীদের মাথা ঢেকে রাখা এবং মাথায় কাপড় দেয়া আযান সংশ্লিষ্ট বিষয় নয়। বরং নারীদের মাথায় কাপড় সব সময় থাকা উচিত। কেননা মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়।‘জিলবার অর্থ হাত, পা, মাথা,সমস্ত শরীর ডেকে রাখার মতো কাপড়। (সূরা : আহজাব, আয়াত : ৫৯)।


তাফসিরবিদদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, ‘জিলবাব’ এমন কাপড়কে বলা হয়, যার মাধ্যমে নারীরা নিজেদের শরীর ঢেকে রাখেন। আর ‘জিলবাব’ অর্থ বড় চাদর, যা মাথাসহ মুখমণ্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করে ফেলে। (তাফসিরে কুরতুবি) 


অর্থাৎ, নারীদের সবসময় পর্দার মধ্যে থাকতে হবে, নিজেকে কাপড় দ্বারা আবৃত্ত রাখতে হবে। ঘরে যদি আপনার গায়রে মাহরাম কেউ থাকে,তাহলে তাদের সামনে আপনাকে অবশ্যই পর্দা করতে হবে। আর যদি গায়রে মাহরাম কেউ না থাকে, তাহলে শালীনতা বজায় রাখায় শ্রেয়,তখন আর পর্দা জরুরি না।মাহরাম দের সামনে না থাকলেও, গায়ের মাহরামদের সামনে অবশ্যই আবৃত্ত থাকতে হবে। তাই এখানে, আযান দেওয়ার সাথে মাথায় কাপড় দেওয়া বা ক্ষনিকের পর্দা করার কোনো সম্পর্ক নেই। 


দ্বিতীয়ত, আযানের সময় মাথায় কাপড় দেওয়ার নির্দেশ কুরআন ও হাদিসের কোথাও নেই। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ-তাবেঈন ,সলফে-সালেহিনদের থেকেও কোনো নির্দেশ পাওয়া যায় নি। অর্থাৎ, এই বিষয়টি কে শরীয়াতের নির্দেশ বা সুন্নাহ মনে করা সর্বোচ্চ ভুল হবে।


তবে,আযানের সময় মাথায় কাপড় দেওয়া এক প্রকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও বলা চলে। পুর্ববর্তী নারীদের পরিক্রমায় সমাজে এই রীতির প্রচলন ঘটেছে।


এখন, তাদের যদি আযান দেওয়ার সময় মাথায় কাপড় দেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করি,তখন তারা এক অদ্ভুত উত্তর দেয়। তারা বলে

"আযানের সময় মাথায় কাপড় না দিলে শয়তান চুলের ফাঁকে এসে আশ্রয় নেই"। 


আজিব! ব্যাপার। আযানের সময় শয়তানের হুশঁ থাকে না, এদিক ওদিক ছোটাছুটি নিজের প্রান বাঁচানোর জন্য। তখন কিভাবে মেয়েদের চুলে আশ্রয় নিবে? এটি সম্পুর্নরুপে কুসংস্কার। শয়তান সব অবস্থায় মানুষের কাছে প্রশ্রয় নিতে পারে। আযানের সময় ঢুকতে পারে, আজানের আগে/পরেও ঢুকতে পারে। আর আযানের আগে ও পরে ঢোকার সম্ভাবনা বেশি আযানের সময় চেয়ে। তাই বলে আযানের সময়ই ঢুকবে, আর মাথায়ই ঢুকবে এমন বিশ্বাস সম্পুর্ন ভ্রান্ত। যদি শয়তানের প্রতারণা থেকে বাঁচতে চান,তাহলে সর্বদা মাথায় কাপড় দিয়ে বের হোন। 


তবে কিছু কিছু আলেম আযানের সময় মাথায় কাপড় দেওয়াকে কিছুটা পজেটিবলি দেখেছেন। তারা মনে করেন,"যদি কোনো নারীর বাসা-বাড়িতে অসতর্কাবস্থায় মাথায় কাপড় না থাকে। তবে আযানের সময় সে যদি সতর্ক হয়, আল্লাহকে ভয় করে মাথায় কাপড় টেনে নেয়। তাহলে এটা আমভাবে ঈমান ও আল্লাহভীতির পরিচায়ক"।


আমার ব্যাক্তিগত মতামত হলো, শুধু আযানের সময় নয়,নারীদের উচিত সর্ব অবস্থায় নিজেদের ঢেকে রাখা। তারা যখন সর্ব অবস্থায় নিজেদের কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখবে,তখন আর কষ্ট করে আযানের সময় মাথা ঢাকতে হবে না।

No comments

Theme images by Storman. Powered by Blogger.